ঢাকা   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫ | ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Image Not Found!

সর্বশেষ সংবাদ

  আকিবের চোখে বাংলাদেশ যেখানে ছিল ভারতের ঠিক পরই (খেলাধুলা)        ভাষা শহীদদের প্রতি প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন (জাতীয়)        মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধান উপদেষ্টা (ময়মনসিংহ)        কুয়েটে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধ থাকবে: সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত (ময়মনসিংহ)        ফুলবাড়িয়া সমিতির দুর্বলতা কাটিয়ে গতিশীল করতে হবে: শামসুল আলম খান (ময়মনসিংহ)        ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা (ময়মনসিংহ)        আজকে ময়মনসিংহ আসছেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী (ময়মনসিংহ)        বিপ্লবীরা ও আ.লীগ একসঙ্গে এ দেশে থাকতে পারে না : হাসনাত (ময়মনসিংহ)        রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন ফের পেছাল (ময়মনসিংহ)        প্রবাসীদের মধ্যে চার লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বিতরণ (জাতীয়)      

‘বাংলাদেশের সংবিধানকে আরও সংক্ষিপ্ত এবং বোধগম্য করার কাজ চলছে’

Logo Missing
প্রকাশিত: 08:18:17 pm, 2024-12-14 |  দেখা হয়েছে: 4 বার।

সংবিধান সংস্কার বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে'কে গত বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এই কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি জানিয়েছেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন বাংলাদেশের সংবিধানকে আরও সংক্ষিপ্ত এবং বোধগম্য করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

সংবিধান কি সংশোধন না পুরোপুরি পূনর্লিখন হচ্ছে- ইন্ডিয়া টুডের এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেছেন, সংশোধন বা পুনর্লিখন বলে এই কাজের ব্যাপ্তি পরিমাপ করা কঠিন। আসলে, এটি উভয় কাজেরই মিশ্রণ। কিছু অনুচ্ছেদ আছে যা সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া বা প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। আবার কিছু ক্ষেত্রে শব্দের পরিবর্তনই যথেষ্ট। সংবিধান হলো জনগণের জন্য। এখানে জটিল, ভারী আইনি শব্দ ব্যবহার করলে সাধারণের মানুষের বোধগম্য হবে না। তাই তাদের জন্য এটা বোধগম্য করাই আমাদের দায়িত্ব

আমাদের কাজ দুটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ধাপে, আমরা সংবিধান পর্যালোচনা করেছি। আমাদের স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এটি কীভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে তা নিয়ে আমরা আলোচনা-পর্যালোচনা করেছি। এরপর অসঙ্গতিগুলি কী ছিল, কী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে ইত্যাদি বিষয় নির্ধারণ করেছি। দ্বিতীয় ধাপে পরিবর্তনের সুপারিশ এবং তার পর্যালোচনা অন্তর্ভূক্ত। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমি সরকারকে বলেছি যে আমি যেহেতু ৭ অক্টোবর দায়িত্ব নিয়েছি, আমার জন্য তিন মাস শেষ হচ্ছে ৬ জানুয়ারি, এবং আমি পুরো মেয়াদ কাজে লাগাব।

গণঅভ্যুত্থানের পর একটি জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের দাবি। কমিশন দেশের জন্য কী ধরনের সংসদ সুপারিশ করবে?

আমাদের কাজের সময় আমরা যেসব অংশীজন এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দেখা করেছি তাদের অনেকেই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পরামর্শ দিয়েছেন। যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের মতো আইনসভার দুটি পৃথক কক্ষ থাকবে। আমরা বিভিন্ন দেশে প্রচলিত এই ব্যবস্থা অধ্যয়ন করেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উভয়কক্ষ একে অপরের সমান, তবে ভারতে রাজ্যসভা হলো উচ্চকক্ষ আর লোকসভা নিম্নকক্ষ। আমরা সম্ভাবনা নিয়ে বিতর্ক করছি এবং আমাদের চূড়ান্ত সুপারিশ সময়মতো আসবে।

এ ছাড়া আমাদের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করা আবশ্যক। এটি সংসদ সদস্যদের অবাধ ভোটদানে বাধা দেয়। কোনো সদস্য তার দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তাদের আসন হারায়। ফলে ক্ষমতাসীন দল তার কর্মের জন্য এই ধারাকে রাবার স্ট্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে। এই ধারার ফলে সংসদ সদস্যরা কখনোই প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণে অনাস্থা ভোট দিতে পারবে না। এটা পরিবর্তন করতে হবে। সদস্যদের অবশ্যই তাদের স্বাধীন ইচ্ছা প্রয়োগ করার ক্ষমতা দিতে হবে।

এ ছাড়া তারপর ২০১১ সালে, ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে, সংবিধানের এক-তৃতীয়াংশ অসংশোধনযোগ্য করা হয়। এই অনমনীয়তা বন্ধ করতে হবে এবং আমরা এটি খতিয়ে দেখছি।

এ ছাড়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রধর্মসহ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ থাকবে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেছেন, বিশ্বের ২৫ শতাংশ দেশেরই রাষ্ট্রধর্ম আছে। এটি তাদের ধর্মনিরপেক্ষ হতে বাধা দেয় না। ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, সংবিধানের বাংলা সংস্করণে এ শব্দটির ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা একটি দর্শন। তাই শব্দ নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়াই ভালো।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের বহুত্ববাদী চরিত্রকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির সঙ্গে আপস করা যাবে না। সেটিই আমাদের ভিত্তি।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে সংবিধান সংস্কার কমিটিতে কেউ না থাকা প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, আমি স্বীকার করছি এটা একটা ভুল হয়েছে, তা আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারিনা। কিন্তু আমায় বলুন যে তাদের অংশগ্রহণই কী তাদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতো? কমিশনে তারা না থাকলেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সমতা প্রদান করার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

পুরো এই কাজ কীভাবে সামলাচ্ছেন?
আসলে আমি শুধু একাই না, আমার সঙ্গে চমৎকার একটি টিম আছে। যাদের মধ্যে প্রফেসর, গবেষক এবং অন্যরা আছেন। আমিসহ নয়জনের এই টিমে আগে থেকে কেউ কাউকে চিনতেন না, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন প্রফেসর একে অপরের পূর্বপরিচিত। কিন্তু এরপরেও আমরা টিম হিসেবে কাজ করছি।

আমরা লিখিতভাবে ২৬টি রাজনৈতিক দল ও তিনটি জোটের কাছ থেকে সুপারিশ নিয়েছি। সেইসঙ্গে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ৫০ হাজার সুপারিশ পেয়েছি। এ ছাড়া ৩০টি সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন ও নয়জন সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ১১ জন শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীর সঙ্গে দেখা করেছি এবং তাদের পরামর্শ নিয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো আমাদের জন্য একটি সমীক্ষা করেছে। তারা ৪৬ হাজার পরিবারের কাছে গেছে এবং তাদের পরামর্শ ও মতামত নিয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত যেসব দেশের জনসংখ্যা ১০ মিলিয়ন বা তার চেয়ে বেশি সেসব দেশের সংবিধান আমরা পরীক্ষা করছি। আমরা সিঙ্গাপুরের মতো ছোট দেশগুলোর সংবিধানের কথা উল্লেখ করেছি।

এছাড়া সাক্ষাৎকারে আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে, তবে কিছু পরিবর্তন জরুরি।